Saturday, December 24, 2016

বাংলাদেশে সিসিটিভি লাগানোর হার অনেক বেড়েছে

গুলশানে হলি আরটিজেনে সন্ত্রাসী হামলা ও বাসাবাড়িতে ঢুকে সাম্প্রতিক কয়েকটি খুনের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে নগরবাসীর মধ্যে। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর হিড়িক পড়েছে। এ ধরনের ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন আবাসিক এলাকার সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সিসি টিভি ক্যামেরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে বেচাকেনার ধুম। ডিজিটাল সিকিউরিটি ওয়ার্ল্ড-এর কর্ণধার ওলিয়ার রহমানের মতে, বর্তমানে সিসিটিভির স্বর্ণযুগ চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু বাসাবাড়ি বা অফিস-আদালতই নয়, ছোটো ছোটো হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে।

 তোপখানা রোডের বৈশাখী রেস্তরাঁর ম্যানেজার মো. সেলিম জানান, নিরাপত্তাই মূল কথা এখন। এ জন্যই আমরা সিসিটিভি লাগিয়েছি। এদিকে গত ১৮ই নভেম্বর প্রকাশকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। বৈঠকে গুরুত্বের সঙ্গে সিসিটিভির বিষয়টি আলোচনায় আসে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদরঘাট থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রধান রাস্তাগুলোতে সিসিটিভি লাগানো কার্যক্রম শুরু হয়। এরই মধ্যে ওইসব এলাকায় ১৬টি সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, দোকানের ভেতরে সিসিটিভি লাগানোর জন্য দোকান মালিক সমিতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন বলেন, প্রকাশক দীপন খুন হওয়ার পর থেকে আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের জীবনের হুমকি রয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠানেরও নিরাপত্তার বিষয় আছে। তাই আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এটা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সিসিটিভি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বনিম্ন সাড়ে ১২শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকায় সিসি ক্যামেরা কেনাবেচা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, তাইওয়ান, চীন ও হংকংসহ বেশকিছু দেশ থেকে সিসিটিভি আমদানি করছেন তারা। সিসিটিভি বিক্রি প্রতিষ্ঠান ক্যামেরা মিউজিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ গাফফার মোল্লা মানবজমিনকে বলেন, সিসিটিভির চাহিদা বেড়ে গেছে প্রচুর। আগের তুলনায় ডাবল বিক্রি হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা এখন খুবই প্রয়োজনীয়। শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারা দেশে এর চাহিদা বেড়েছে। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ডিজিটাল ক্যামেরা মার্ট-এর ম্যানেজার সাদ্দাম হোসেন জানান, অ্যাপার্টমেন্ট, মার্কেট ও ফ্যাক্টরিসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো সিসিটিভি ক্রয় করছে। আগে বড় বড় শপিং মলে সিসিটিভির চাহিদা ছিল। কিন্তু এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তিগত বাসাবাড়িতে সিসিটিভির অনেক চাহিদা।

এই মার্কেটে সিসিটিভি কিনতে আসা মিরপুরের একজন বাড়ির মালিক বাহাদুর মিয়া বলেন, নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এখন সিসিটিভি। বিপদ-আপদ আগে থেকে জানান দিয়ে আসে না। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। এদিকে ধানমণ্ডির একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান। পাশাপাশি তিনি ওই বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ। তিনিও এসেছেন বেশকিছু সিসিটিভি কিনতে। মান্নান জানান, ফ্ল্যাটের অন্যান্য মালিক মিলে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া, পুলিশ থেকেও তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু খুন-খারাপি নয়, চুরি-ডাকাতি ঠেকাতেও সিসিটিভি কাজে আসবে। কয়টি ক্যামেরা ক্রয় করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিসিটিভির বিষয়ে আমার পূর্ব কোন ধারণা নেই। তবে আমরা আমাদের ভবনের কয়েকটি স্পর্ট চিহ্নিত করেছি। এদিকে সিসিটিভির এই চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে টেকনিশিয়ানদের চাহিদাও। শাহাদাত হোসেন রিন্টু নামের এক ফ্রিল্যান্স ব্যবসায়ী ৬ বছর ধরে সিসিটিভি কণ্ট্রাক্টে লাগিয়ে দেয়ার কাজের সঙ্গে জড়িত। তিনি নিয়মিত স্টেডিয়াম মার্কেট ও বায়তুল মোকাররমের নিচতলা থেকে অর্ডার অনুযায়ী পাইকারি দামে সিসিটিভি ক্রয় করেন। রিন্টু জানান, যেকোন সময়ের চাইতে এখন তার ব্যবসার অবস্থা ভালো। কাজের চাপও অনেক বেশি। কাজ করে কুল পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আগে এমনও হয়েছে যে, পুরো মাসই বসে থাকতে হতো। কিন্তু এখন সপ্তাহজুড়ে কাজের অর্ডার। তিনি জানান, গত একমাসে রাজধানীর উত্তরার ৫টি রেস্টুরেন্টে সিসিটিভি লাগানোর কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া, ২টি মার্কেট ও ৩টি আবাসিক ভবনে সিসিটিভি লাগিয়েছেন। রিন্টু বলেন, এখনও তার হাতে প্রায় ১০টি অর্ডার ঝুলে আছে। রিন্টুর দেয়া তথ্যমতে, সিসিটিভি লাগান এমন ১০/১২ জনের সঙ্গে তার জানাশোনা রয়েছে। মাঝে মাঝে এমনও হয় সময়ের অভাবে একজন আরেকজনকে কাজ দিয়ে দেয়। এজন্য তাদের মাঝে কিছু বোঝাপড়ার ব্যাপারও থাকে বলে জানান রিন্টু।

শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা বাসাবাড়ি নয়। সরকারি অফিসগুলোতেও সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে গুরুত্বসহকারে। এমনকি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যালয়েও এ কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে। রাজধানীর মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর সেগুনবাগিচা থেকে আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর হচ্ছে। জাদুঘরের সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী মানবজমিনকে জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ৪৬টি মুভিং ক্যামেরাসহ মোট ১১৬টি সিসিটিভি স্থাপন করা হচ্ছে সেখানে। তিনি বলেন, সিসিটিভির মাধ্যমে কোন ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় না। কিন্তু সহজে আইডেন্টিফাই করা যায়। এ জন্য পুরনো জাদুঘরের সিসিটিভি থেকে বর্তমানে অনেক হাই রেজুলেশন সম্পন্ন ক্যামেরা ক্রয় করা হয়েছে। যাতে চেহারা পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। কারণ, আগের ক্যামেরাগুলোতে চেহারা নির্ধারণ করা অনেক বেশি কঠিন ছিলো।

এদিকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরের যে সমস্ত বাসাবাড়িতে সিসিটিভি লাগানো হয়নি, সেগুলোতে ব্যক্তি উদ্যোগে ক্যামেরা লাগানোর তাগিদ দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এ ব্যাপারে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা শহরে হাজারের অধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে পুরো ঢাকা মহনগর এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা। কিন্তু এটা সময়ের ব্যাপার। অবশ্য আমাদের প্রক্রিয়া চলমান। পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকাকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে আমরা ব্যক্তি উদ্যোগটাকে সবচেয়ে বেশি স্বাগত জানাচ্ছি। এ জন্য বিভিন্ন এলাকার আবাসিক সোসাইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছি। তাদের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। সে অনুযায়ী রাজধানীর গুলশান, বারিধারা ও নিকেতন সোসাইটি এক সঙ্গে মিলে এসব এলাকার রাস্তাগুলোতে সিসিটিভি লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। এরই মধ্যে গুলশান শুটিং ক্লাব থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তাদের। গুলশান সোসাইটির কর্মকর্তা শফিক জানান, এ কাজে আমরা ফান্ড গঠন করেছি। বিভিন্ন স্পন্সররা আমাদের কাজে এগিয়ে আসছে। ডিএমপি থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

মোবাইলে সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ: বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনেক দূরত্বে গিয়েও সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত এলাকা দেখা যায় খুব সহজে। ওয়াই ফাইয়ের মাধ্যমে যুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো যে কোন ডিভাইসে বসেই কম্পিউটার অথবা মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এসব ক্যামেরা রয়েছে ১.৩ মেগাপিক্সেল থেকে শুরু করে ৮ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত রেজ্যুলেশন। এবং ৬০০ টিভিএল থেকে শুরু করে ৯০০ টিভিএল পর্যন্ত সিসি টিভি। স্মল সলিউশন থেকে শুরু করে এক্সট্রা লার্জ সলিউশন রেঞ্জের ডিভিআর এবং এনভিআরও রয়েছে। এর সিএনএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে একাধারে ৫ হাজার আইপি ক্যামেরা মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা রয়েছে।
(সৌজন্যেঃ মানব জমিন)

আপনি যদি সিসিটিভি ক্যামেরা আপনার দোকান , বাসাবাড়ি, কারখানা,অফিস, স্কুল-কলেজ  সহ যে কোন প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করতে যোগাযোগ করুন এখানে

যেকোন প্রয়োজনেঃ
এস এস ফেরদৌস
মোবাইলঃ 01759155144
ইমেইলঃ sabusenew@gmail


1 comment:

  1. Free Online Casino Games for Real Money in Canada
    Explore casino games for real money in Canada. Learn about bonuses, 제왕 카지노 banking methods and how 인카지노 to download and install deccasino best online casino games  Rating: 3.9 · ‎12 votes

    ReplyDelete